লাশ দাফনে বাঁধা দেয়া পুলিশের হাতে আটক ২। ঢাকার ধামরাইয়ে কিশোরী মেয়ের নির্যাতনে পিতার মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়না তদন্ত ছাড়া মরাদেহ দাফনে বাঁধা দেয়ায় গ্রামবাসীর দুইজনকে আটক করেছে ধামরাই থানা পুলিশ। সেই সঙ্গে ময়না তদন্তের ওই বৃদ্ধের মরদেহর উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের ছুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ধামরাই থানা পুলিশি ।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের লাড়য়াকুন্ড এলাকায়। স্থানীয় সূত্র জানায়,৪দিন আগে সকাল ১১টার দিকে উক্ত গ্রামের মোঃ আসাদুল্লাহ ওরফে আরশেদকে তার কিশোরী মেয়ে সাথী আক্তার বিভিন্ন কায়দায় অমানুষীক নির্যাতন করে। এতে তিনি গুরুতর অসূস্থ হয়ে পড়েন।
এসময় স্থানীয় নুরুল হক ও আব্দুল নাতু মিয়া নামে দুই মাতাব্বর ওই কিশোরীকে ধমক দেন ও গালমন্দ করেন। এতে ওই কিশোরী লাফিয়ে লাফিয়ে লাথি মারে ওই দুই মাতাব্বরের পেটের ওপর। ফলে তারা ওই কিশোরীকে চর থাপ্পর মেরে প্রতিবাদ জানান। এরপর ওই বৃদ্ধ আসাদুল্লাহকে গুরুতর অসূস্থবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিৎসাধীনবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু ঘটে। বিকালে ওই বৃদ্ধের মরদেহ বাড়ীতে আনার পর দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। এতে বাঁধ সাধে গ্রামবাসী মানুষ। তারা ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনে বাঁধা দেন এবং ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর জন্য তার কিশোরী মেয়ে সাথী আক্তারকেই দায়-ই করা হয়। গ্রামবাসীর জোর দাবি ওই কিশোরীর অমানুষিক নির্যাতনেই ওই বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটেছে। কোন উপায়ন্তর না দেখে এব্যাপারে ওই কিশোরী ধামরাই থানা পুলিশের কাছে লাশ দাফনে বাঁধা প্রদান কারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এরপর উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জসীম উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে মোঃ আব্দুল নাতু মিয়া ও আলেকা আক্তার নামে দুই গ্রামবাসীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। অন্যরা পালিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ময়না তদন্তের জন্য ওই বৃদ্ধের মরদেহটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। আব্দুল নাতু মিয়া জানান,আসাদুল্লাকে আমরা কয়েকজন গ্রামবাসী দেখতে গিয়েছিলাম।
আমাদের চোখের সামনেই তাকে অমানুষিক ভাবে নির্যাতন করে আসাদুল্লার ওই কিশোরী মেয়ে সাথী আক্তার। আমরা তাকে ধমক দিলে সে উল্টো লাফিয়ে লাফিয়ে আমাদের পেটের ওপর লাথি মারে।পরে আমরাও তাকে চরতাপ্পর দেই। কিশোরী সাথী আক্তার জানায়,আমার বাবা বেশ কিছুদিন ধরেই অসূস্থ। কোন নির্যাতনই আমি করিনি আমার বাবার ওপর। আমরা খুবই গরীব মানুষ।
নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। আমার মা একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে। আমাদের সহায় সম্বল বলে কিছুই নেই। আমার বাবা আমাদের একমাত্র মাতা গুঁজার ঠাই ঘরের টিনগুলো বিক্রির জন্য নুরুল হক ও নাতুসহ বেশ কিছু লোকজনকে ঠিক করেছে। তাই তার সঙ্গে আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়। তাই তাদের ওপর আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই আঘাত করি।
উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন,লাশ দাফনে বাঁধা দেয়ায় দুইজনকে আটক করেছি। ময়না তদন্তের পরই বৃদ্ধের মৃত্যু আসল কারণ জানা যাবে। মরদেহ উদ্ধার করে ছুরতহাল প্রতিবেদন সহ তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়না তদন্তের পর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।