ঢাকার ধামরাইয়ে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতাল কতৃপক্ষের সু- দৃষ্টির অভাবে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। নেই কোন ডাক্তার, নেই পরিচর্যা করার মতো কোন লোকজন।
হাসপাতালটির প্রধান ফটক ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। যে কোন মানুষ অনায়াসে ভিতরে ঢুকতে ও বের হতে পারে। এমন দৃশ্য দেখা যায়, উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর এলাকায় প্রায় ১৪ বিঘা বা ৪ একর জমির বেশি জায়গা জুরে রয়েছে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতাল।
২০০৬ সালে প্রতান্ত গ্রাম এলাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য নির্মিত হয়েছিল হাসপাতালটি।সু-চিকিৎসা পাওয়ার আশায় হাসপাতালটির নামে সাধারণ মানুষ তাদের জমি দান করে ছিলেন।কিন্তু সেই সুফল আজও জনগণ ভোগ করতে পারেন নি। সাধারণ অসহায়র মানুষ আজও কি সুনালী সূর্য দেখতে পাবে কিনা তা সাধারণ মানুষের কাছে শুভঙ্করের ফাঁকি মনে হচ্ছে বলে জানিছে রোয়াইল ইউনিয়ন বাসি। এই বিষয়ে জমিদাতা আব্দুস সাত্তার বলেন,আমি ৫৫ শতাংশ জমি হাসপাতালে নাম মাত্র দামে এলাকার স্বার্থে দিয়েছিলাম।আমাদের দুই শরীকের জমি। কিন্তু সেই আশা আজও পূরণ হয় নি। হাসপাতালটি চালু হবে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসবে তাই একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি।কিন্তু চিকিৎসা সেবা নিতে আসে মানুষ কিন্তু ডাক্তার পাওয়া যায় না। তিনি মনের দুঃখে বলেন,যদি হাসপাতাল না হয়ে এই জায়গায় গার্মেন্টস হতো তাহলেই ভালো হতো,কারণ অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান হলে তারা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পেত। এমন দাবি করেন জমিদাতা সাত্তার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন,হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা না থাকায়, হাসপাতলের ভিতরে নেশা করার আশ্রয়স্থল করেছে মাদকসেবীরা।অনায়াসে লোকজন ভিতরে ঢুকে তারপর কে কি করে কেউ তার কোন খোজও রাখে না।
শুধু দিনেই নয় গভীর রাত পর্যন্ত চলে নেশাখোরদের আড্ডা।যদি হাসপাতালে দারোয়ান এবং ভিতরে দেখাশোনা করার জন্য লোকজন থাকতো তাহলে এমন দৃশ্য চোখে পড়তো না। এই বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা শফিজউদ্দিন বলেন, দেখভালের কেউ না থাকায় ধীরে ধীরে হাসপাতালটির আলো নিভে যাচ্ছে, ভিতরে গরু-ছাগল থেকে শুরু করে সব ধরণের কাজকর্ম করে থাকেন এলাকার লোকজন। তাদের ময়লা আবর্জনা দিয়ে হাসপাতালের প্রবেশ পথ ভরে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানে কোন ডাক্তার আসে না একজন নার্স আসে সপ্তাহে একদিন তাও আধা ঘণ্টা পরেই চলে যায়।শুধু হাসপাতালটির ভিতরে দরজা খোলার জন্য একজন ল্যাবটেকনিশিয়ান আছে। সেও অনিয়মিত। রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন,বাড়ি তৈরি করার জন্য তার জমিতে মাটি দিয়ে ভরাট করেন ২০০৬সালে।তখন কর্নেল বজলুর রশিদ মৃধা এলাকার দরিদ্র মানুষের সেবা দিতে জমি একোয়ার করেন। আমার বাড়ির জায়গা ছেড়ে দিয়ে ছিলাম শুধু হাসপাতালের জন্য।কিন্তু সূর্যের আলো আজও দেখলো না হাসপাতালটি।প্রাসনের সুদৃষ্টির অভাবে অবহেলায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়ন থেকে ইসলামপুর সরকারি হাসপাতাল দুরুত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তাই লোকজনের সেবার জন্য হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন তৈরি করা হয়।
কিন্তু কোন রোগী ছিল না সেখানে। ইসলামপুর হাসপাতালের ৬ জন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের সেখানে রাখা হয়েছিল।কিন্তু ২ দিন পরে আবার তাদের নিয়ে আসা হয়। প্রতিনিয়ত রোগী সেবা নিতে এসে ফিরে যায়।বেশির ভাগই বন্ধ থাকে হাসপাতাল। তাছাড়া ডাক্তার থাকে না বা ঔষধ থাকে না।আলমগীর হোসেন নামে একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান দিয়েই সকালে হাসপাতালটির গেইট খোলা হয়। এবিষয়ে রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তিনবারের চেয়ারম্যান ও বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ কাজিমুদ্দিন খান বলেন,ধামরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে এই হাসপাতালটি অবস্থিত।যারা সেবা পাওয়ার জন্য জমি দিয়েছে তারা বেশির ভাগই মারা গেছে। তাদের উত্তরসূরী যারা আছে তারা উপকৃত হবে। কিন্তু সে আশা আর হচ্ছে না।
যদি হাসপাতালটি চালু থাকতো তবে রোয়াইল ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নবাসির লোকজন এর সুবিধা পেতো। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। আমি যদি সামনে জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান হতে পারি তাহলে হাসপাতালটি চালু করার জন্য যা যা দরকার সবই করবো। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নূর রিফফাত আরা বলেন, একমাত্র জনবলের অভাবে হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না। যে ডাক্তার ওখানে ডিউটিতে যায় তিনিই রোগী দেখেন আবার তাকেই ঔষুধ তাকেই দিতে হয়।একাই সব করতে হয়।তবে জনবলের সংকট কমলেই হাসপাতালটি চালু করা হবে। এটি চালু করা খুবই দরকার বলে মনে করেন।