ঢাকার সাভারে নিজ ঘরে এক ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ীকে নৃশংস ভাবে হত্যার চার মাস পর অভিযুক্ত নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক গ্রেফতার করেছে পিবিআই। এমন চাঞ্চল্যকর এই হত্যার কারণ হিসেবে তদন্তে স্ত্রীর পরকিয়ার কথা জানিয়েছে বাহিনীটি। বুধবার বিকেলে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে গ্রেফতার দুই আসামি হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আশুলিয়ার জিরাবো ও জামগড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন,আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার নিহত এলিম সরকারের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি ও তার প্রেমিক নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার তেলটুপি গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে রবিউল করিম পিন্টু। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৭ শে মার্চ রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে এলিম সরকার তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ভোরে এলিম সরকারে স্ত্রী কেমিলি ঘুম থেকে উঠে পাশেই তার শ্বশুড়ের বাসায় যান।সেখানে বাড়ির অন্যদের সাথে কথা বলে কয়েক ঘন্টা পর আবার বাসায় ফিরে আসেন। এসময় নিজ কক্ষের বিছানায় এলিম সরকারকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তার ডাক-চিৎকার লোকজন ছুটে আসলে এলিমকে মৃত অবস্থায় পান। এলিমের শরীরের ১৩ স্থানে ধারালো ছুরির আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। পরে নিহতের বাবা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২১ জুলাই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। পিবিআই জানায়, গ্রেফতার রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইন ম্যান হিসেবে চাকুরী করে। চাকুরীর সুবাদে ভিকটিম এলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুৎ এর মিটার লাগানোর কাজ করতে যায় সে। পরে ভিকটিমের স্ত্রী কেমিলির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে পিন্টুর। বিষয়টি কেমিলির স্বামী টের পেয়ে গেলে তিনি তার স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ডেকে তা প্রকাশ করে দিবেন বলে জানান। এই ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে মারাত্মক দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। তবে পরকীয়ার বিষয়টি যাতে কেউ জানতে না পারে সে জন্য ঘটনার এক সপ্তাহ আগে কেমিলি ও তার প্রেমিক পিন্টু মিলে এলিম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।এই অনুযায়ী পিন্টু ভিকটিমের বাসায় দুজন ভাড়াটিয়া খুনি ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থাও করে দেন। কিন্তু তারা কাজটি না করতে পারায় পিন্টু নিজেই কাজটি করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২৮ মার্চ সকাল ৯ টার দিকে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেমিলি রাতের বেলা দই এর সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে এলিম সরকারকে খাইয়ে দেয়। উক্ত ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে কেমিলিকে সরবরাহ করে পিন্টু। তিনি আরও বলেন, ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে এলিম সরকার নিস্তেজ হয়ে গেলে সকাল বেলা পিন্টু তার অপর সহযোগী নিয়ে বাসায় এসে রাম-দা দিয়ে কুপিয়ে এলিম সরকারকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার আগে এলিম সরকারের বাসার সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিআর বক্স খুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে কেমিলি স্ত্রী ডিস ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে উক্ত ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রচার করতে থাকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পিবিআই এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালেহ ইমরান জানান, মূলত প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েই এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বিকেলে আদালতে আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় আরও আসামির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রম এখনও চলমান আছে।