দেশে দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ১৯৮১ সাল থেকে দলীয় প্রধানের দায়িত্বে আছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের তিন বার নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ওবায়দুল কাদের টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন।
জাতীয় সম্মেলনের আগে হওয়া জেলা ও উপজেলা সম্মেলনেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরোনোদের দিয়েই কমিটি করা হয়েছে।
গতকাল (২৪ ডিসেম্বর) শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন শেষে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সভাপতি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন। তাই তিনি দলে বড় পরিবর্তন আনতে চাননি। তিনি আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বারবার আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। দলকে সুসংগঠিত করা এবং দেশ পরিচালনা কঠিন কাজ। তবু আমি এই দায়িত্ব মাথা পেতে নিচ্ছি।আওয়ামী লীগের জনসমর্থন আছে। তবে ভোটার আনতে হবে। দল সংগঠিত না হলে সেটা হবে না। সদস্য সংগ্রহ অভিযান বাড়াতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, সেবা করতে হবে। ভবিষ্যতে নতুন নেতৃত্ব আনার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন তিনি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম অধিবেশন শেষ হয় বেলা সোয়া একটার দিকে। এরপর বিরতি দিয়ে তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে বসে কাউন্সিল অধিবেশন। প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলরকে নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মুলতবি বৈঠকে বসেন। দেশের আটটি বিভাগ থেকে আটটি জেলার নেতাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেন শেখ হাসিনা। এরপর কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান দলের বাজেট উপস্থাপন করেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রাজ্জাক হালনাগাদ গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করেন। কাউন্সিলররা একে একে সব অনুমোদন দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই থাকি না কেন, আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। নতুন আসতে হবে এটা হলো সব সময়। পুরাতনের বিদায়, নতুনের আগমনএটাই চিরাচরিত নিয়ম। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বান জানান।
মঞ্চে আরোহণ করেন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, মসিউর রহমান ও শাহাবুদ্দিন। ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন প্রথমেই সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব করার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় কাউন্সিলররা একযোগে শেখ হাসিনার নাম বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এরপর এই প্রস্তাবে সমর্থন করেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (সাবেক মন্ত্রী) মোস্তাফিজুর রহমান।সভাপতি পদে আর কোনো প্রস্তাব না থাকায় পরবর্তী তিন বছরের জন্য এ পদে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (খাদ্যমন্ত্রী) সাধন চন্দ্র মজুমদার। তা সমর্থন করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান। এই পদে আর কোনো প্রস্তাব না থাকায় ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান দলের নেতারা।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪-দলীয় জোটের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তবে বিএনপির কোনো নেতা আসেননি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকেরাও অতিথির সারিতে ছিলেন।