হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হবে। ব্যবসায়ী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্যটির দাম বেড়ে যাবে। এতে করে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের খরচ বাড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রণালি বন্ধের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদন লাগবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘পারস্য উপসাগরের একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ হচ্ছে হরমুজ প্রণালি। এটা দিয়ে বিশ্বে প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি পরিবহন হয়। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে এই প্রণালি বন্ধের হুমকি এবং বিকল্প রুট ব্যবহারের ইঙ্গিত জ্বালানি ও শিপিং খাতে বড় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়, কাঁচামাল পরিবহন, জ্বালানিসংকট, রপ্তানি খরচ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে সমন্বিত প্রস্তুতি আগেভাগেই গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাতে করে বিকল্প সরবরাহ পথ, জ্বালানি চাহিদা ও কূটনৈতিক কৌশল সময়োপযোগী হয়।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির কিছু হলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সম্প্রতি আমেরিকার হামলার পর ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ারও শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আগে থেকে আমরা সরকারকে সতর্ক করেছিলাম দাম পড়ার সময় বেশি করে জ্বালানি কিনে রাখার জন্য, সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু সরকার আমলে নেয়নি। দাম যদি বেড়ে যায়, সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। অতীত অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস থেকে এটা দেখেছি। এর প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে’।
জানা গেছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত তেলের এক-পঞ্চমাংশ বা ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ব্যারেল তেল এবং প্রায় ৩০ শতাংশ এলএনজি পরিবহন করা হয়।
ইরান অতীতেও এই প্রণালি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে, তবে তারা কখনোই সেই হুমকি কার্যকর করেনি। কিন্তু এবারে বন্ধ হলে তা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে নতুন সংকটে ফেলবে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড়োসড়ো প্রভাব পড়বে।