২২ দফা দাবি নিয়ে ঢাকার ধামরাইয়ে ‘দি একমি ল্যাবরেটরি লিমিটেড নামে একটি ঔষধ কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। সেই সাথে কারখানার ডি জি এম প্রডাকশন মোঃ জাহিদুল ইসলামকে পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন বেতন ভাতার বৈষম্য, শ্রমিক অফিসারদের মাঝে সম্পর্কের বৈষম্য এবং খাবারের মান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
বুধবার (২৮আগষ্ট) বেলা দুইটার দিকে ধামরাই পৌর শহরের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে ‘দি একমি ল্যাবরেটরি লিমিটেড কারখানায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। এই সময় সেনাবাহীনির একটি টিম তাদেরকে শান্ত করে কারখানার ভিতরে পাঠিয়ে দেয়। কারখানার ভিতরে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এই সময় কোন শ্রমিককে কারখানার বাইরে আসতে দিচ্ছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানার সামনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বেতন ভাতার বৈষম্য ছাড়াও শ্রমিকরা ২২দফা দাবি পেশ করে বিক্ষোভ করেন।
ডি জি এম প্রডাকশন জাহিদুল ইসলাম এর পদত্যাগ দাবি করে শ্রমিকরা বলেন তিনি শ্রমিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং কথায় কথায় চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখান। শ্রমিকরা ৭কর্ম দিবসের মধ্যে শ্রমিকদের ভোটের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করার দাবি জানান। আন্দোলনের সাথে জড়িত কোন শ্রমিককে হয়রানি ও চাকরিচ্যুত করা যাবে না এবং ডেইলি ও ক্যাজ্যুয়ালে যে শ্রমিক কাজ করেন তাদের প্রতিদিন ৭৫০টাকা হাজিরা দিতে হবে।
নতুন অস্থায়ী শ্রমিকদের ৬মাসের মাথায় স্থায়ী এবং পুরাতন শ্রমিকদের ১৫দিনের মধ্যেই স্থায়ী করার দাবি জানান। শ্রমিকদের বেতন ৮০% বৃদ্ধি, নাইট এলাউন্স ৫০০টাকা, বছর পর পর অটো প্রমোশন, বছর শেষে প্রডাকশন বোনাসের দাবী করেন শ্রমিকরা। স্থায়ী শ্রমিকদের ২০বছর পূর্ণ হলে হজ্জে পাঠানোর পাঠানোর দাবি করেন তারা। এছাড়া ওভারটাইম বিল ৫দিনের মধ্যে পরিশোধ ও হয়রানি মূলক ছুটি বন্ধসহ নানা অভিযোগ ও অনিয়মের কথা তুলে ধরেন শ্রমিকরা। যে পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি মানা না হবে ততদিন পর্যন্ত কর্মবিরতি ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কর্মসুচি ঘোষনা করেন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, ক্যান্টিনে নিম্নমানের খাবার দিয়ে থাকেন। শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ১০ ঘন্টা কাজ করিয়ে নেন। এ দিকে রাত ১১টার দিকে কারখানা ছুটি দিলে মহাবিপাকে পড়েন নারী শ্রমিকরা।
৩০০ টাকা ডেইলি হাজিরায় শ্রমিক কাজ করে। দ্রব্য মুল্যের দাম এতো বেশি য়ে এই টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। অফিসারদের বেতন বাড়লেও বাড়ে না শ্রমিকদের, নেই কোন সুযোগ সুবিধা। এই বিষয়ে কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, অফিসারদের সন্তনদের জন্য ডে কেয়ারের ব্যবস্থা থাকলেও শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। তাই আমাদের সন্তানদের জন্যও এই ব্যবস্থা করতে হবে। আগে নাস্তা বিল ছিল ১০০টাকা, কিন্তু বর্তমানে সেই বিল ৫০টাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। এমন বৈষম্যের শিকার প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে আমাদের। এই বিষয়ে মোরাদসহ অনেকেই বলেন, আমাদের পারমানেন্ট হতে ১০/১২ বছর সময় লাগে। যেখানে ৬ মাসের মধ্যে পারমানেন্ট করার কথা। উপরের স্যারদের যাকে ভালো লাগে তার চাকরি স্থায়ী হয়, তাছাড়া বছরের পর বছর পরে থাকলেও চাকরি স্থায়ীকরণ হয় না।
আমরা অনেকেই আছি চাকরির বয়স প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর হলেও চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না। আমাদের সেই ডেলি ৩০০টাকা করে দিয়ে যাচ্ছে কারকানার মালিক। শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান থাকায় আত্মগোপনে চলে গেছেন ডি, জি, এম প্রডাকশন জাহিদুল ইসলামসহ কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা মালিকপক্ষের সকল লোকজন। তবে কারখানার সামনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।